নিজস্ব প্রতিনিধি:
যুবসমাজ হল একটি সমাজের চালিকাশক্তি। বাঙালি বীরের জাতি। আমরা মায়ের ভাষা কেড়ে নেয়ার নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হবার হাত থেকে জাতিকে উদ্ধার করেছি।
আর এসব কর্মকান্ডে সবার আগে প্রাণ দিয়েছে তরুণ ও যুবসমাজ। দেশে একটি বিশাল জনগোষ্ঠি হলো যুবসমাজ। যুবশক্তি যে কোন দেশের সম্ভাবনাময় উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের যুবসমাজ সেই মহান কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করে যাচ্ছে। সমাজ ও দেশ গড়ার কাজে তাদের অংশগ্রহণ ও অবদান অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।
স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিক্যাল কলেজ ইত্যাদিতে তাদের উপস্থিতি দেশের হৃদয়ের ধমণী ও শিরা-উপশিরাতে গতি এনে দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কারিকুলামের পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে তাদের দেশ বিনির্মাণের জন্য প্রস্তুতি দৃশ্যমান। ভরা যৌবনে যুবসমাজের বেড়ে উঠা ও নিজ ভিত্তি গঠনে অংশগ্রহণ অতীব আশার সঞ্চার করে।
যুবসমাজের লেখাপড়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, শিল্প-সাহিত্য চর্চা সাংস্কতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড পরিবার, সমাজ ও জাতিকে গতিশীল রেখেছে। যুবসমাজ দেশের অভ্যন্তরে লেখাপড়া যেমন করছে, তেমনি দেশের বাইরে গিয়েও বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে।
দেশের প্রধান খাত পোশাকশিল্প যুবসমাজের অংশগ্রহণে প্রসারিত হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ৭০ লক্ষ পোশাককর্মীদের সিংহভাগই যুবসমাজের প্রতিনিধি। প্রবাসী যুবশক্তির অবদানে বৈদেশিক অর্থের রিজার্ভ যে কোন সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদীয়মান যুবসমাজ ডিজিটাল বাংলাদেশ অপটিকাল ফাইবারের সুবাদে সহজেই জ্ঞান সাগরে সাঁতার দিতে শুরু করেছে। কোনো বিপদ তাদের চলার গতিকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারে না, বিপদকে আমলে না নিয়ে নতুন কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়ার একটি মানসিকতা বিকশিত হচ্ছে।
আর্ন্তজাতিক যুব দিবস ২০২১ এর প্রতিপাদ্য হচ্ছে “খাদ্য ব্যবস্থাকে রূপান্তর করা: মানব ও গ্রহের জন্য যুব উদ্ভাবন। এটি তুলে ধরার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সৃষ্ট বিরূপ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সাফল্য অদম্য প্রাণশক্তিতে ভরপুর তরুণদের অংশগ্রহণে ছাড়া অর্জিত হবে না।
জাতিসংঘ কর্তৃক এটা স্বীকার করা হয়েছে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে যা নিশ্চিত করে যে যুবকরা গ্রহ পুনরুদ্ধার এবং জীবনরক্ষার জন্য যৌথভাবে এবং পৃথকভাবে প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করে, খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরে জীববৈচিত্র্য সংহত করার সময়। আগামী ৩০ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা ২০০ কোটি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আর অসংখ্য স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা স্বীকৃত হয়ে উঠেছে যে কেবল অধিক পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন আরো টেকসইভাবে মানব ও গ্রহের সুস্থতা নিশ্চিত করবে না। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলিও মোকাবেলা করতে হবে। যেমন দারিদ্র্য বিমোচনসহ ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বক্ষেত্রে আন্তসংযোগ, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ; এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় এবং তার পরবর্তী সময়ে খাদ্য ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সক্ষমতা উন্নয়ন অপরিহার্য। খাদ্য ব্যবস্থায় শুধু খাবার টেবিল থেকে কিভাবে খাবার পাওয়া যায় তার মৌলিক উপাদানগুলোই নয়, জনসংখ্যার খাওয়ানোর সাতে জড়িত সমস্ত প্রক্রিয়া এবং প্রক্রিয়া চলাকালীন সৃষ্ট নেতিবাচক বাহ্যিকতা যেমন বায়ু ও মহাসাগর দূষণের পাশাপাশি মরুকরণ। অস্থির চাষ পদ্ধতি এবং জলবায়ু সংকটের ফলে জেনেটিক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। খাদ্য ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবলায় জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এ বছর আর্ন্তজাতিক যুব দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে যুবশক্তি, প্রবৃত্তি, উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা সমাধানের মাধ্যমে তরুণদের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা যা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের ফুড সিস্টেম সামিট পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারে। যুবকদের চলার পথ সীমাহীন। তাদের সম্মুখপানে সদা অগ্রসরমান। কোনো ঘাত প্রতিঘাত তাদের চলার পথকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারবে না বলেই বিশ্বাস করি।
পরিশেষে সর্বস্তরের অদম্য যুবশক্তিকে আবারো আন্তজাতিক যুব দিবসে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম.রেজাউল করিম চৌধুরী, মেয়র ,চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।