আত্মোন্নয়নে সমাজ বিনির্মানের মডেল ” অগ্রগ্রাহী “

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কারা বদলে দেবে আগামীর বাংলাদেশ? কাদের সৃজনশীল চিন্তাধারা এগিয়ে নিবে বাংলাদেশকে? কারা গতানুগতিক ঘুনেধরা সমাজের পরিবর্তন করবে? কাদের হাত ধরে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করবে? তারাই করবে যারা তরুণ-আমাদের স্বপ্ন, আমাদের বিশ্বাস। যাদের মধ্যে আছে অজেয় জয় করার আকাংখা। তারা স্বপ্ন দেখবে, স্বপ্ন দেখাবে, স্বপ্নের সমান হবে আর একসময় স্বপ্নকে অতিক্রম করে গড়ে তুলবে বাংলাদেশকে। তারা যেমন আবেগপ্রবণ হবে তেমনি গঠনমূলকও হবে। আর যুক্তি, প্রযুক্তি, মানবতা আর বাস্তবতা হবে তাদের শক্তি। দেশপ্রেম, উন্নত ও উদার ভাবনা, স্বাধীনতার চেতনা, মা, মাটি আর মানুষের প্রতি তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে আজকের বাংলাদেশকে। অবাক বিশ্ব তাকিয়ে বলবে জয়তু তারুণ্য জয়তু বাংলাদেশ।


জাতি গঠনের জন্য মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা জরুরি, আর এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা এবং সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধশালী আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবে কেবল ছাত্রসমাজই।


সমৃদ্ধ ও অবক্ষয়মুক্ত সমাজ বিনির্মানের জন্য তরুণ ছাত্রসমাজ পালন করতে পারে অনবদ্য ভূমিকা। আত্মোন্নয়নের ভিত্তিতে পরিচালিত সংগঠন সমাজকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।


কারণ আজকের ছাত্র-তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। আজকের কুঁড়িরাই আগামীর ফুল হয়ে প্রস্ফুটিত হয়।
গোলাম মোস্তফার ভাষায়,”ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে।”

শ্বাশ্বত সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থানে মুখরিত সত্য ও সুন্দরের ধ্বজাধারী অগ্রগ্রাহী এক্ষেত্রে একটি অনুকরণীয় মডেল।


তরুণ ছাত্র সমাজের মেধা মনন ও আত্নগঠনের ব্যাতিক্রমী এ সংগঠন আজ থেকে ১০ বছর আগে ২০১১ সালের ১লা সেপ্টেম্বর আজকের এইদিনে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার অন্তর্গত চুনতী বড় মিয়াজী পাড়ার একদল স্বপ্নবাজ, উদ্যমী কিশোরের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল। যে বয়সে অন্য কিশোরেরা ব্যস্ত ছিল খেলাধুলা কিংবা শুধু নিজস্ব গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ। সেখানে তারা সমাজ তথা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ার লক্ষ্যে নিজকে গড়ার প্রত্যয়ী হয়েই প্রতিষ্ঠা করেছিল নষ্ট স্রোতের বিপরীতে সুন্দরের সহযাত্রী হিসেবে অগ্রগ্রাহী।


কথা হচ্ছিলো অগ্রগ্রাহীর বর্তমান সভাপতি আবু বকর সামিতের সাথে।তিনি জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অগ্রগ্রাহী নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা,সাহিত্য,সংস্কৃতির বিকাশে আত্নোন্নয়ন,চিন্তার বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের জন্য স্থায়ী উন্নয়নের মাধ্যমে আত্ননির্ভরশীল,সুখী,সমৃদ্ধ ও অবক্ষয়মুক্ত সমাজ গঠনের স্থায়ী লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।


সমাজে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সদস্যদের ক্ষেত্রে মাদকের বিরুদ্ধে অগ্রগ্রাহী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। অগ্রগ্রাহী ছাত্রসমাজকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নৈতিক,মানবিক,সংস্কৃতিমনা,বিজ্ঞাননির্ভর, কর্তব্যপরায়ণ,শৃংখলাপরায়ণ,সৎ জীবনের মানসিকতা সম্পন্ন,সৌহার্দপূর্ণ,অধ্যাবসায়ী ও সহনশীল প্রভৃতি জীবনমুখী,বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে চায়।সাথে সাথে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী স্থানিক,সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবধারিত করতে চায়।


অগ্রগ্রাহী সামাজিক ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা থেকে শিক্ষা নিয়ে নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন,উদ্দীপনামূলক,সৃজনশীল ও ঐক্যের ভিত্তিতে পরিচালিত কর্মকাণ্ডকে বিকশিত করে প্রজন্ম পরম্পরায় সঞ্চালনের কাজ করে যাচ্ছে। সমাজে প্রচলিত নানাবিধ অনিয়ম,অসঙ্গতি ও আঁধার তাড়িয়ে হিংসাকে পায়ে ধলে আলোর মশাল হাতে নিয়ে আলোকিত সমাজ উপহার দিতে চায়।


অগ্রগ্রাহীর কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করছিলেন এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আবু হুরাইরা। অগ্রগ্রাহী তার লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও কাউন্সেলিং,পাঠাগার স্থাপন ও পাঠ্যভাস তৈরি,ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, ফ্রি কোচিং কার্যক্রম পরিচালনা, মেধা যাচাই পরীক্ষার আয়োজন, ছাত্রকল্যাণ তহবিল গঠন ও গরিব মেধাবী,অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বার্ষিকশিক্ষা সফর,ঈদ পুণর্মিলনী আয়োজন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সহ নানা শিক্ষানির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। অগ্রগ্রাহীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ছাবেকুল মারুফ জামী আরও যুক্ত করেন যে, করোনা মহামারীর শুরু থেকেই অগ্রগ্রাহী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। করোনা সচেতনতায় প্রচারণা,জীবাণুনাশক ছিটানো,চিকিৎসা কার্যক্রমে সহায়তা,অসহায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণসহ দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছে। মহামারির শুরু থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে পাঠাভ্যাস বিমুখ না হয় তজ্জন্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আদলেই ফ্রি কোচিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে যা বোদ্ধামহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

অগ্রগ্রাহীর প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আছরার মু. হামিদ বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে অগ্রগ্রাহী সুস্থ ধারার সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজকে মানবসম্পদ এ পরিণত করার যে মেগাপ্ল্যানকে সামনে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তা আজ কলি থেকে মহীরুহে পরিণত হচ্ছে। তখনকার কিশোরদের অনেকেই আজকে পড়ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউবা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার আবার অনেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্ফুটনের অপেক্ষায় রয়েছে।

তরুণরাই বদলে দিতে পারে পুরো ব্যবস্থাকে। সুকান্তের ভাষায়, “এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী,
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।” পৃথিবীকে গড়ার লক্ষ্যে সবার আগে নিজকে গড়ার অগ্রগ্রাহীর এই মডেল বাস্তবায়ন করে বদলে যেতে পারে একটি সমাজ,বদলে যেতে পারে আমাদের প্রিয় সোনার বাংলাদেশ।