স্পোর্টস ডেস্ক :
পেলের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়া মেসি ম্যাচ শেষে অঝড় কান্না করলেন, আর এই কান্না বলে দিচ্ছে কতটা মহান আর সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি।
বাছাইপর্বে বহুদিন পর নিজেদের মাঠে খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। করোনার ভয় কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন দর্শকও। আজ মনুমেন্তালে যারা গিয়েছিলেন, পয়সা উসুল করেই বাড়ি ফিরেছেন।
মেসি সারাজীবন কম কথা শোনেননি। বার্সেলোনার হয়ে যেমন নিজেকে উজাড় করে দেন, নিজের দেশের হয়ে ঠিক তেমনটা করতে দেখা যায় না, আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসি বার্সেলোনার মতো সপ্রতিভ নন, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামলে খেলা ভুলে যান মেসি- আরও কত কী! তবে এবার সমালোচকদের থামাতে যা করে দেখালেন, তা করতে বিশ্বের প্রায় সব খেলোয়াড় শুধু স্বপ্নই দেখবেন।
মেসির হ্যাটট্রিকেই ৩-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচশেষে আনন্দের আতিশয্যে মেসির চোখে আবেগের বান ডাকল যেন। চোখ দিয়ে টপটপ করে পড়তে থাকল পানি। কেউ যদি এখনও মনে করেন, আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি নিজের শতভাগ দেন না, হ্যাটট্রিকের দৃশ্যটার পাশাপাশি এই ছবিটাও তাঁদের সমালোচনার জবাব হয়েই থাকবে বহু বহু যুগ।
যদিও নিন্দুকদের মুখ যে আগেও বন্ধ করেননি, তা নয়। এবার বলিভিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে জাতীয় দলের হয়ে নিজের গোলসংখ্যা ৭৯ তে নিয়ে গেলেন মেসি। ছাড়িয়ে গেলেন ব্রাজিলের হয়ে ৭৭ গোল করা পেলেকে। কনমেবলের ইতিহাসে এত বেশি গোল আর কারওর নেই। ম্যাচ শেষের সাক্ষাৎকারেও মেসির গলা দিয়ে উপচে পড়ল আবেগ।
ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন মেসির মা, ভাই। তাঁরাও সরাসরি সাক্ষী হয়েছেন এই ইতিহাসের। মেসি আবেগপ্রবণ হবেন না-ই বা কেন!
নিজের মাঠে এই উদযাপনটা করতে পেরে মেসি নিজেও খুশি, ‘মনুমেন্তালে এই রেকর্ডটা উদযাপন করতে পারছি, এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। আমার মা ও ভাই স্ট্যাডে আছে, তাঁরা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। তাঁরা আজ আমার জন্য উদযাপন করছে। আমি অনেক খুশি।’এই রেকর্ড গড়াটা যে মেসির স্বপ্ন ছিল, সেটা লুকোননি, ‘আমি আসলেই এই মূহুর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছি। আমি এই রেকর্ডটা নিজের করে নিতে চেয়েছি। রেকর্ডটা ভাঙার স্বপ্ন দেখেছি। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে রেকর্ডটা আমার হয়েছে। অসাধারণ এক মূহুর্ত এটা।’
বর্তমানে খেলছেন কনমেবলের এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে মেসির পেছনে সর্বোচ্চ গোলদাতার এই রেকর্ডে আরও আছেন নেইমার, যার গোল ৬৮টা। ৬৩ গোল নিয়ে আছেন উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজও। মেসি যেভাবে খেলছেন, তাতে আরও অনেক দিন রেকর্ডটা তাঁর কাছেই থাকবে এটা নিশ্চিন্তে বলে দেওয়া যায়।
কোপা আমেরিকা জয়ের পর এই প্রথম নিজের দেশের দর্শকদের সামনে খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। পরম আরাধ্য শিরোপাটা ম্যাচ শেষে দর্শকদের দেখিয়েছেন মেসি ও তাঁর দল। যার কারণে আরও বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মেসি। জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা খরা ঘোচানো, পেলের রেকর্ড ভেঙে কনমেবলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া – বছরটা মেসি ভুলবেন না কখনও!