রাজনৈতিক ডেস্ক:
সরকারের নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। আগের শর্ত বহাল রেখে সাজা স্থগিতের এই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
শর্তানুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, চতুর্থবারের মতো খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হলো।দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছর ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে। দণ্ডের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলে তিনি কারাগার থেকে নিজ বাসায় যান। ওই মুক্তির মেয়াদ শেষে গত বছর সেপ্টেম্বরে একই শর্তে তা আরো ছয় মাসের জন্য দণ্ডাদেশ স্থগিত বাড়ানো হয়। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন।
নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। খালেদা জিয়ার নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা রয়েছে। এর মধ্যে গত এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে চিকিৎসাও নেন তিনি। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর তার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে কিছুদিন আগে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য, এ বিষয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা কী এবং আইন অনুযায়ী তিনি বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেতে পারেন কি না?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, যে ধারায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেটা সরকারের নির্বাহী আদেশ। এই মুক্তির মেয়াদ সরকার বর্ধিত করতে পারে। খালেদা জিয়া আবেদন করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে সরকার দুটি শর্তে তার সাজা স্থগিত করে মুক্তি দিয়েছে। এখন শুধু নতুন করে মুক্তির মেয়াদ বর্ধিতই করা যাবে। কিন্তু তার বিদেশে যাওয়ার বিষয় যদি আসে, তাহলে তাকে নতুন করে আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে যে আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং শর্তে বর্তমানে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেটা বাতিল করতে হবে। তাকে পুনরায় কারাগারে গিয়ে নতুন করে বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। তখন সরকার কী করবে, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যাবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় কিছু করার নেই।
২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদ- নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদ- ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দি থাকার পর চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।