নগর প্রতিবেদক :
সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ১০ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপিত হবে। এবার নগরের ১৬ থানায় ২৭৬ পূজামণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা।
শনিবার (৯ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য তুলে ধরেন মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের দ্বি-জাতি তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে এ দেশের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবসময় ঐক্যবদ্ধ।
ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি আস্থা রেখেই তারা যুক্ত হয়েছিল ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭২ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সংবিধান রচনা করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা বারবার বাধাগ্রস্ত করছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। তবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ঐতিহ্যগত বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। এ বন্ধন প্রকৃতির মতোই সত্য ও শাশ্বত। মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য যেকোনো সময় চেষ্টা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ১১টি দাবি তুলে ধরা হয়।
যার মধ্যে রয়েছে- ৭২-এর সংবিধানের আলোকে সকল সম্প্রদায়ের সমঅধিকার নিশ্চিত করা; হিন্দু সম্প্রদায়ের মঠ-মন্দি, ঘরবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটপাট, হামলা ভাঙচুরসহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা; দুর্গোৎসবকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান এবং শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে চারদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা; প্রায় তিন কোটি সনাতনী সমাজের অন্যতম দুঃখ সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী বাতিলকৃত শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন কার্যকর করে অবিলম্বে প্রকৃত ভূমি মালিকদের ফেরত দেওয়া; সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ প্রশাসন, সচিবালয়সহ সকল সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আনুপাতিক হারে নিয়োগ; সরকারি সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন; বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের অবসান করা; চট্টগ্রামের তীর্থভূমি সীতাকুণ্ডকে জাতীয় তীর্থস্থান ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা করা; সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; সীতাকুণ্ডের শ্রীশ্রী চন্দ্রনাথ ধাম ও কক্সবাজার আদিনাথ মন্দিরে সরকারি সহায়তায় উন্নয়ন করার আশু ব্যবস্থা গ্রহণ, দেবোত্তর সম্পত্তি সংক্ষণ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা এবং শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন সরকার-বেসরকারি সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদ সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য, সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা অরবিন্দ পাল অরুণ ও অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, সহসভাপতি অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, সুমন দেবনাথ, রত্নাকর দাশ টুনু, প্রদীপ শীল ও বিপ্লব কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন মল্লিক, সজল দত্ত, অ্যাডভোকেট নটু চৌধুরী ও বিপ্লব সেন, অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন, সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জন দত্ত, সহদপ্তর সম্পাদক রিপন রায় চৌধুরী, সহধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ সম্পাদক অমিত ঘোষ এবং কার্যকরী সদস্য রাহুল দত্ত, অয়ন ধর ও নিঝুম পারিয়াল।
শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিষদ সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য।