নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয় ও ধ্রুমজাল।
করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সাল ও একই কারণে গতবছর ২০২১ সালেও হয়নি বাঙালির এই প্রাণের উৎসব।
এবার বলীখেলার ১১৩ তম আসর হওয়ার কথা। তবে শত বছরেও বেশি সময়ের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। যদিও আয়োজকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা আসেনি এখনও। আয়োজক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলে সেখানেও এ বিষয়ে যে ইঙ্গিত মিলছে তা না হবার দিকেই চলার মতো।
আব্দুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ‘এখনো বলী খেলা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিইনি। কেননা, লালদীঘি মাঠ উদ্বোধন না হলে তো বলীখেলা ও মেলা আয়োজন করতে পারব না।’ এমন পরিস্থিতিতে বলী খেলার দর্শকদের পাশাপাশি মেলায় অংশ নেওয়া দোকানীদের একটাই দাবি— দ্রুত মাঠ উদ্বোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। কেন না সবার জন্য মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে খেলা ও মেলা আয়োজনে আর কোনো বাধা থাকবে না।
এ বিষয়ে সিএমপির উপ কমিশনার পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘লালদীঘিতে এবারও বৈশাখী মেলা বসার সম্ভাবনা অনেকটা নেই। তবে বলীখেলার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয় বলেও জানান তিনি।’ তবে আয়োজকরা বলেছেন, মেলা না হলে শুধু খেলার আয়োজন করার কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই।
উল্লেখ্য যে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হতো জব্বারের বলীখেলা। এই বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘির আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসত বৈশাখী মেলা।
কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটা ভালো থাকার পরও সংশয় বা ধ্রুমজাল তৈরি হয়েছে এক কারণে। আর সেটি লালদীঘী মাঠ এখনো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে না দেওয়ার কারণেই বলীখেলা হবে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, লালদীঘি মাঠে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই মহান মানুষটির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুই বছর আগে লালদীঘি মাঠে ঐতিহাসিক ছয় দফার স্মৃতি সংরক্ষণে একটি প্রকল্প হাতে নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এরপর বদলে যায় লাল দীঘি মাঠের চিরচেনা রূপ। গতজব্বা বছরের মার্চে এই মাঠের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত উদ্বোধন করা হয়নি মাঠটি। উদ্বোধন না হওয়ায় মাঠটি এখনো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।
জব্বারের যে বলী খেলা হয় তার মূল আয়োজনটি হয় এই লালা দিঘীর মাঠেই। কিন্তু এখন মাঠ বন্ধ থাকায় বলীখেলার প্রাচীন এ আয়োজনও থমকে আছে মাঠ উদ্বোধনের কারণে। আর এই মাঠ উদ্বোধন না হওয়া পর্যন্ত হয়তো বলীখেলা হবে না। আর বলী খেলা না হলে মেলাও হবে না এমনি ইঙ্গিত মিলেছে মেলা কমিটি ও প্রসাশনের কাছ থেকে।