নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারে ইফতার পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার আকুতি উপেক্ষা করে মোরশেদ আলী (৪০) নামে এক ব্যক্তিতে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার পাঁচজনই একই পরিবারের সদস্য। এদের মধ্যে তিন ভাই ও এক ভাইয়ের দুই ছেলে আছেন। কৃষিজমিতে সেচের পানি সরবরাহের ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হল- মাহমুদুল হক (৫২), তার দুই ভাই নুরুল হক (৫৩) ও মোহাম্মদ আলী (৫০) এবং মাহমুদুলের দুই ছেলে আব্দুল আজিজ (২৮) ও আবদুল্লাহ (৩০)।
গত ৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে কক্সবাজার সদর উপজেলার চেরাংঘর এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মোরশেদ আলী (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়।
স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে মোরশেদের ইফতারির কথা বলে প্রাণভিক্ষার আবেদন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এ ঘটনায় মোরশেদের ভাই জাহেদ আলী বাদি হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, কৃষিজমিতে সেচের পানি সরবরাহের ব্যবসা দীর্ঘসময় ধরে মোরশেদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কয়েকবছর আগে প্রভাব দেখিয়ে সেই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয় মাহমুদুলের পরিবার। তারা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করত। মোরশেদ বিদেশে থাকা অবস্থায় এই ব্যবসার হাতবদল হয়। তিনি বিদেশ থেকে ফিরে কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি শুনে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তিনি আবারও ব্যবসা তাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলে মাহমুদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হন। এর জের ধরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। ‘ঘটনার দিন মোরশেদ বাজারে ইফতারি কিনতে যাচ্ছিলেন। প্রকাশ্য দিবালোকে বাজারে দুইদিকের রাস্তা বন্ধ করে তাকে ঘিরে ফেলা হয়। আবদুল্লাহ ও আজিজ লাঠি, লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে ফেলে দেয়। মাহমুদুল হক কিরিচের কোপ দিয়ে ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মোহাম্মদ আলী হাতুড়ি দিয়ে অণ্ডকোষে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
হত্যাকারীরা এতটাই প্রভাবশালী যে, বাজারের লোকজন ঘটনা দেখেও ভয়ে প্রতিরোধ করতে আসেনি। এরপরও মোহাম্মদ আলী ১৫-২০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে বীরদর্পে চলে যায়।’
র্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচজন টেকনাফে গিয়ে আত্মগোপন করেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করে কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা সবাই পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। ঘটনার পর তাদের দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।