অর্থনীতি ডেস্ক :
অত্যন্ত সন্নিকটে পবিত্র ঈদুল ফিতর কিন্তু এখনো ঈদের বোনাস পায়নি চট্টগ্রামের ২২৭ কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা। অথচ কারখানা মালিকদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১১ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধের কথা।
অন্যদিকে বেতন বোনাস পরিশোধের সরকারি ডেটলাইনও শেষ হয়েছে ১৩ দিন আগে।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএর নেতৃবৃন্দ ও কারখানার আইনশৃঙ্খলার রক্ষায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার ৪৭০টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ঈদ উপলক্ষে ১ হাজার ২৪৩টি কারখানা তাদের নিয়োজিত শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করেছে। এরমধ্যে ৯২৬টি কারখানায় এখনো বেতন পরিশোধ করা হয়নি।
যদিও এরমধ্যে কিছু কিছু কারখানার শ্রমিকরা পরবর্তী মাসের কথা বিবেচনা করে ঈদের আগে এপ্রিলের অর্ধেক বেতন নিতে নারাজ। অন্যদিকে ৫৪৪টি কারখানা ঈদের বোনাসের সঙ্গে সরকারি নির্দেশনানুযায়ী ৫০ শতাংশ হারে বেতন পরিশোধ করেছে। আর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের ২২৭ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেনি।
বিজিএমইএ বলছে, চট্টগ্রামে বিজিএমইএর তালিকাভুক্ত ৬৬টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৫২টি কারখানা বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে। বাকি ১৪ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এখনো পরিশোধ হয়নি।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ১৪০টি কারখানার মধ্যে বেতন-ভাতা বাকি রয়েছে শুধুমাত্র একটি কারখানায়। এছাড়া বিটিএমএর দুটি ও বেপজার আওতাভুক্ত একটি কারখানার নাম বেতন-ভাতা পরিশোধ না করার তালিকায় রয়েছে।
এদিকে কারখানা মালিকরা বলছেন, বেতন-বোনাস পরিশোধের দিক থেকে চট্টগ্রাম এগিয়ে রয়েছে। অধিকাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। অনেক কারখানা ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করেছেন। বাকিরাও ৩০ তারিখের মধ্যে সব অর্থ পরিশোধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা যাতে সুন্দরভাবে ঈদের উৎসব উদযাপন করতে পারে সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। ঈদের আগেই সব ধরনের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আমাদের তালিকাভুক্ত সব কারখানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই আমাদের তালিকাভুক্ত কারখানা মালিকরা শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ৭০ ভাগেরও বেশি কারখানা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে দিয়েছেন। ঈদের আগে অর্থাৎ ৩০ তারিখের মধ্যে বাকি কারখানাগুলোও অর্থ পরিশোধ করবেন।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (ইন্টেলিজেন্স এন্ড মিডিয়া) সেলিম নেওয়াজ সিভয়েসকে বলেন, রমজান শুরু হওয়ার পরেই আমাদের পুলিশ সুপারসহ আমরা কারখানা মালিক সমিতির সংগঠন যেমন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএর সাথে বৈঠক করেছিলাম। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সমস্যা হতে পারে তা চিহ্নিত করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি যাতে কোন ধরনের সমস্যা তৈরি না হয়। এখন পর্যন্ত শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ এ ধরনের কোন সমস্যা তৈরি হয়নি। এদিক থেকে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আশা রাখছি কোন ধরনের সমস্যা আর হবেনা। পাশাপাশি যেসব কারখানা এখনো বেতন-ভাতা পরিশোধ করেননি তারা ৩০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কারখানা মালিকরা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ৫০ শতাংশ হারে বেতন পরিশোধ করতে চাচ্ছেন। অনেক শ্রমিকরা ৫০ শতাংশ বেতন নিতে চাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে শ্রমিকরা বলেছেন, এই মাসের ৫০ শতাংশ বেতন নিয়ে নিলে আগামী মাসে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে। তবে ৫৪৪ কারখানা ৫০ শতাংশ বেতন ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে।
বাকিরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন।