আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে কানাডায় বর্তমানে লক্ষাধিক বাংলাদেশী বসবাস করছেন। গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা পাচার করে থেকে বহু ব্যবসায়ী ও আমলা শ্রেণি কানাডায় অভিবাসী হয়ে রয়েছেন। এসব অভিবাসীদের অধিকাংশই থাকেন টরেন্টো, এজেক্স বা ডাউন টাউন সংলগ্ন এলাকায়। এসব অভিবাসীদের অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন সংলগ্ন এলাকাতেই। তাদের মধ্যে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। আবার অনেকেই স্ত্রী-সন্তান কানাডায় রেখে নিজেরা বাংলাদেশে বা অন্যান্য প্রবাসে কর্মসংস্থান করছেন। স্ত্রী প্রধান পরিবার হওয়ার কারণে এসব এলাকা বেগমপাড়া নামেই পরিচিতি পেয়ে গেছে।সাম্প্রতিক সময়ে এই বেগমপাড়ার ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার ও দখল দারিত্ব নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই আলোচনায় উঠে এসেছে দুই বাংলাদেশী অভিবাসীর নাম।
দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়ে কানাডায় অভিবাসী হওয়া দুই শিল্পপতি গাজী বেলায়েত ও আজাদ খানের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ উঠেছে। বেগমপাড়ায় এই দুই শিল্পপতি ‘দ্য লাস্ট ডন’ নামেও পরিচিতি পেয়েছেন।
বেগমপাড়ার সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্য এদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ঈশারাতেই পরিচালিত হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানিয়েছেন, দ্য লাস্ট ডনের একজন আজাদ খান বাংলাদেশের বাগদাদ গ্রুপের পরিচালক। আজাদ খান ও তার ভাইয়েরা মিলে বাগদাদ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় পাড়ি দিয়েছেন। দেশের সিটি ব্যাংক, আজাদ খান ও তাদের মালিকানাধীন বাগদাদ গ্রুপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে। বর্তমান আজাদ খান ও তার ভাইয়েরা সবাই পরিবারপরিজন নিয়ে কানাডায় বসতি গেড়েছেন।
মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে কানাডায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে সুপার মার্কেট, হোটেল, পেট্রো কানাডা, কমার্শিয়াল প্লাজা, কনস্ট্রাকশন, শেল’স এসো, গ্যাস স্টেশন, কারওয়াশ, ভবন নির্মাণসহ নানামুখী ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। আজাদ খানের বার্ষিক টার্ন ওভার প্রায় ২০০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার।
অন্যদিকে, কানাডার বেগমপাড়ায় আরেক ডন বাংলাদেশের অন্যতম ঋণখেলাপী তালিকাভুক্ত গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু ওরফে জিবি হোসেন। বাংলাদেশে তিনি জাহাজ স্ক্র্যাপ ব্যবসা করতেন। স্ক্র্যাপ ব্যবসার জন্য বিদেশি জাহাজ ক্রয়ের নাম দিয়ে গাজী বেলায়েত বেসিক ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীরা আরো জানান, ৩০০ কোটি টাকা বা কানাডীয় ৪৬ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতে অভিযুক্ত গাজী বেলায়েত টরেন্টোয় থাকেন। তিনি টরেন্টোর লেক সংলগ্ন স্কারবরো ব্লাফসের ৯১, হিল ক্রিসেন্ট, স্কারবরো, অন্টারিও এম১এম ১জে৩, কানাডা ঠিকানায় একটি বিলাসবহুল ভবন কিনেছেন। যার মূল্য আনুমানিক ১৬ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ১০৪ কোটি টাকা।
আবার একই ভবনে গাজী বেলায়েতের নামে কবডেন ট্র্যাভেল সেন্টার ইনকরপোরেটেড নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর থেকে কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের নিবন্ধনভুক্ত।
২০১৯ সালে গাজী বেলায়েত এজেক্সে প্রায় ১০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার দিয়ে একটা শপিং প্লাজা কিনে নেন। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। টরেন্টোর শহর তলিতে ‘আলট্রামার’ ব্র্যান্ডের গ্যাস স্টেশন বা পেট্রলপাম্পও রয়েছে তার। টরেন্টো শহরের ডেনফোর্থ অ্যাভিনিউ, অন্টারিও-তে রয়েছে এ দম্পতির কলাপাতা বুফে কুজিন এবং ভাসাবি’স নাহিদ’স কালেকশন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে গাজী বেলায়েতের বার্ষিক টার্ন ওভার প্রায় ২০০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার।বাগদাদ গ্রপপের আজাদ খান ও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ব্যবসায়ী গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু কানাডায় ব্যবসায়িক পার্টনার। তাদের নিয়ন্ত্রণেই বর্তমানে বেগমপাড়ার ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশী অভিবাসীরা আরো জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে কানাডায় ঈর্ষান্বিত প্রভাব প্রতিপত্তি, অর্থ বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যাওয়ায় আজাদ খান ও গাজী বেলায়েতকে নিয়ে সাধারণ বাংলাদেশীরাই নয়, কানাডিয়ানদের মধ্যেও চলছে আলোচনা। কানাডায় নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য এই দুই ব্যবসায়ী কানাডায় নানা সামাজিক সেবামূলক কর্মকান্ডে জড়িত হয়েছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোটা অংকের অনুদানসহ জনসেবামূলক খাতেও তারা নিয়োজিত আছেন।