ডায়াবেটিস প্রতিহত করার প্রত্যয় নিয়ে সমাপ্ত হলো চিটাগং ডায়াবেটিস সামিট

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

ডায়াবেটিস প্রতিহত করার প্রত্যয় নিয়ে সমাপ্ত হলো চিটাগং ডায়াবেটিস সামিট ২০২২।

ডায়াবেটিসের এই অবস্থা প্রতিহত করার লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার জন্য প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো এই ডায়াবেটিস সামিট। আয়োজনে ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং এণ্ড ইনোভেশন ল্যাবরেটরি (এনরিচ), ডিজিস বায়োলজি এন্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ (ডিবিএমই), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন এর জনস্বাস্থ্য বিভাগ।

সামবিটের মাধ্যমে উঠে আসা তথ্য বলছে, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে আশংকাজনক ভাবে বেড়েই যাচ্ছে ডায়াবেটিসের হার। শুধু তাই নয়, দেশের সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিস আছে যে তিনটি জেলায় তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিভিন্ন কর্মকান্ড থাকলেও তরুণদের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুবই কম।

চিটাগং ডায়াবেটিস সামিট অনুষ্ঠানে দিনব্যাপী এই আয়োজন ছিল ডায়াবেটিস নিয়ে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, ডকুমেন্টারি তৈরি প্রতিযোগিতা, ডায়াবেটিস নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ডায়াবেটিস নিয়ে চট্টগ্রামে গত ৪ বছরে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা কর্মকাণ্ড উপস্থাপন।

আয়োজনটির উদ্বোধন করেন এশিয়ান ওমেন ইউনিভার্সিটির ডিন ড. ডেভিড টেইলর।

এছাড়া উদ্বোধনী পর্বে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক ডা. মাসুদ রানা এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস এর সেলস কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার মজুমদার।

বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ আদনান মান্নান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডাঃ ফারহানা আক্তার ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন এর শিক্ষক ও গবেষক ডঃ নাজমুল আলম।

উদ্বোধনের পরবর্তীতে ডায়াবেটিস কেন হয়, ডায়াবেটিস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ও ডায়াবেটিসে কি কি লক্ষণ প্রতীয়মান হয় এবং ডায়াবেটিসের জন্য কি কি চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় সেটি নিয়ে একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার।

পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃস্কুল এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতা। এতে চ্যাম্পিয়ন হয় ডাঃ খাস্তগীর স্কুল। প্রথম রানার্সআপ হয় চট্টগ্রাম গভর্মেন্ট মডেল হাই স্কুল। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, প্রথম রানার্সআপ হয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং সেকেন্ড রানার্সআপ হয় ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগং। ডায়াবেটিস রোগীর জীবন নিয়ে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমতিয়াজ ইমন, সারিয়া কুন্ডু এবং ইউএসটিসি এর হৃদি দাস। ডকুমেন্টারি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় সৈয়দ আবরার ইয়াসিন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডাঃ আবুল ফয়সাল নুরুদ্দিন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডাঃ এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, ফটোগ্রাফার সৌরভ দাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারজানা শারমিন ও আফরোজা আক্তার তন্বী।

পরবর্তীতে উপস্থাপিত হয় চট্টগ্রামে পরিচালিত ডায়াবেটিস নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ ও সাম্প্রতিক তথ্য।

এতে ডা. ফারহানা আক্তার দেখান গৃহিণীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে বেশি এবং তরুণদের মধ্যে আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি ডায়াবেটিস বেড়ে গেছে। কোভিড পরবর্তী ডায়াবেটিস রোগীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে গেছে। শিশুদের মধ্যে প্রতি দুইজনের একজন ডায়াবেটিস সম্পর্কে কিছুই জানেনা। ইনসুলিন কিংবা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ৬০ ভাগ শিশু কিছুই শোনেনি।

ডাক্তার নাজমুল আলম বলেন, ৭০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে স্নায়ু দুর্বলতা, চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিক ফুট, কিডনী সমস্যা, হতাশা দেখা যাচ্ছে। অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান অবহিত করেন, প্রতি দুজনের একজন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে জিনগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, ফলত তাদের মধ্যে ইনসুলিন এবং মেটফরমিন এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ডায়াবেটিসের ওষুধ কাজ করছে না।

চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগী লক্ষনীয় হারে বাড়ছে। এই জিনগত পরিবর্তনকে ডায়াবেটিসের অগ্রিম পরীক্ষা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. ইসমাইল খান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. শাহানা আক্তার, সিভাসুর অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি ফাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ তৌহিদ হোসাইন, অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম, অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ইসমাঈল খান বলেন, ডায়বেটিস নিয়ে যত বেশি সচেতনতামূলক কর্মকান্ডে স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থীদের কে যুক্ত করা যাবে তত বেশি ডায়বেটিস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।

এছাড়াও চট্টগ্রামে এ ধরনের আয়োজন আরো বেশি হওয়া উচিৎ বলে এরা মনে করেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ শাহেনা আক্তার বলেন, ডায়বেটিস সংক্রান্ত যেকোনো কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। চট্টগ্রামে ডায়বেটিসের সেবা উন্নততর করবার ক্ষেত্রে তাঁরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং ভবিষ্যতের যেকোনো গবেষণায় তাঁরা সম্পৃক্ত থাকার জন্য সদা প্রস্তুত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, ডায়বেটিস নিয়ে শুধু চিকিৎসা দিলেই চলবে না,প্রয়োজন বিস্তর গবেষণার।চট্টগ্রাম থেকে নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে যেটি খুবই আশাব্যঞ্জক একটি ব্যাপার।এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন।

পাশাপাশি ডায়বেটিস নিয়ে গবেষকদের আরো বেশি সক্রিয়হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এইপ্রজন্ম থেকে থেকে আগামীতে অনেক বেশি গবেষক তৈরী হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে নাবিলা রহমান জুঁই এবং ফারহানা ইয়াসমিন মুন্নি।

অনুষ্ঠানের ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৭৭জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো বেক্সিমকো ফার্মা এবং শিওরসেল চট্টগ্রাম।

এছাড়াও পার্টনার হিসেবে ছিলো চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন পাব্লিক হেলথ ক্লাব, হোয়াইট বর্ড সায়েন্স ক্লাব, এবং ইউএসটিসি বিবিটেক সায়েন্স ক্লাব। আয়োজনের ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে ছিলো ” বিজ্ঞানচিন্তা”।