নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার বিবিরহাটস্থ মোমিন টাওয়ারের স্বামীর ইন্ধনে শ্বশুরপক্ষের লোকজন কর্তৃক ৭ম তলার ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে গৃহবধু জেসমিন আক্তার (১৮) হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারপূর্বক উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানিয়েছেন নিহতের মা ওয়াছ খাতুন।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস. রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ দাবী জানান।
নিহত জেসমিন আক্তার ফটিকছড়ি উপজেলার পশ্চিম সুন্দরপুরের কান্দির পাড় এলাকার চিকন মিয়া মিস্ত্রী বাড়ির আবদুর রহিমের কনিষ্ট মেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রহিম, মুহাম্মদ রানা, মোছাম্মৎ রীমাসহ পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিছুদিন পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভাস্থ দৌলতপুরের হাফেজ চৌধুরী বাড়ির নুরুল আলমের পুত্র প্রবাসী মোঃ আরফাতের সাথে মোবাইলে জেসমিনের পরিচয় পরবর্তী প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
বিগত ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি তারিখে চট্টগ্রাম আদালত ভবনস্থ জনৈক এক আইনজীবির চেম্বারে নিয়ে মোঃ আরফাতকে ভিডিও কলে রেখে ভার্চুয়ালি আক্দ পড়ানো হয়। এর পর শ্বশুরপক্ষের লোকজন জেসমিনকে বিবিরহাটস্থ মোমিন টাওয়ারের বাসায় নিয়ে যায়। জেসমিনের পিতা-মাতা বিষয়টি জানতে পেরে প্রবাসী মোঃ আরফাতের পরিবোরের সাথে যোগাযোগ করে সামাজিক বৈঠকের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা মোহরানা ধার্য্য করে নিকাহনামা রেজিষ্ট্রি করতে রাজি হয়। জেসমিন আক্তারের সাথে প্রবাসী মোঃ আরফাতের বিবাহের বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে আরফাতের পরিবারের সদস্যরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত প্রবাসী স্বামী মোঃ আরফাতের নির্দেশে তার পরিবারের সদস্যরা মারধর করে জেসমিনকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
কয়েকদিন পর জেসমিনের শ্বাশুড়ি নাহারু বেগম (৫০) গিয়ে বাবার বাড়ি থেকে জেসমিনকে বিবিরহাটস্থ বাসায় নিয়ে আসে। বিগত ২০২১ সালের ১৮ মে দুপুরে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা পারস্পরিক যোগসাজশে জেসমিন আক্তারকে বাসার ছাদে তুলে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে ফেলে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের মা ওয়াছ খাতুন বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ সেটি গ্রহণ না করে ছিঁড়ে ফেলে তারা নিজেরা মনগড়া একটি অভিযোগ টাইপ করে জেসমিনের মা কে দস্তখত দিতে বাধ্য করে। কিন্তু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও জেসমিনের মা কোন সহযোগিতা পান নি বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, থানায় গিয়ে জেসমিন হত্যার সুষ্ঠ বিচার না পেয়ে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন চেয়ে বিগত ১৮ অক্টোবর তারিখে নিহত জেসমিনের মা ওয়াছ খাতুন বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করলে আদালত শুনানী শেষে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তভার দেন। এ বিষয়টি জানতে পেরে মামলার ফটিকছড়ি থানা পুলিশ গত ৪ নভেম্বর তারিখে একটি মনগড়া চার্জশীট আদালতে প্রেরণ করেন।
চলতি ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি তারিখে এ চার্জশীটের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নারাজি দাখিল করেন নিহত গৃহবধু জেসমিনের মা ওয়াছ খাতুন। বিজ্ঞ আদালত নারাজী আবেদন গ্রহণ করে এটি জেলা পিবিআইকে পুনঃতদন্তের আদেশ দেন।
বর্তমানে মামলাটি তুলে নিতে আসামীরা মামলার বাদী ও বাদীর পরিবারের সদস্যদের চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে মামলার বাদী ও পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। নিহত জেসমিন হত্যা মামলার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে এ মামলার সকল আসামীকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বাদী ওয়াছ খাতুন।