নগরীর টেকসই উন্নয়নে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে: চসিক মেয়র

নগর প্রতিবেদক :

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, করোনাকালীন সংকট মোকাবেলায় লকডাউনের মধ্যেও আমরা জনগুরুত্বপূর্ণ জরুরী সেবা কাজ চলামান রাখলেও অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতিগত কারণে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এখন লকডাউন অবমুক্ত হওয়ায় নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষমতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী লক্ষ্য পুরণে উদ্দমী হয়ে এই নগরীকে সর্বসাধারনের বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে দৃষ্যমান সমস্যার আশু সমাধান এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রায় চসিকের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের সকলকে একযোগে অর্পিত দায়িত্ব পালনে নিবেদিত হতে হবে।

২৯ আগষ্ট রোববার সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পুরাতন নগর ভবনের কে.বি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চসিক ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৭ম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন।

তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজস্ব এখতিয়ার ভূক্ত আয়ের উৎস রাজস্ব আদায় খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, চসিক কখনো সরকারি থোক বরাদ্দের উপর নির্ভলশীল ছিলো না এবং এখনো নেই। তাই রাজস্ব বিভাগকে আরো বেশি গতিশীল হতে হবে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কোথায় কোথয় অসমাঞ্জস্য বা কর নির্ধারনগত ত্রæটি বিচ্যুতি ও পরিসংখ্যানগত জরিপের অভাব রয়েছে তা চিহ্নিত করে হাল নাগাদ করতে হবে। এবং এই ক্ষেত্রে যৌক্তিক আয়ের পরিধি বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এ ক্ষেত্রে যেন করদাতাদের প্রতি কোন অবিচার অন্যায় চাপ প্রয়োগ না হয়।

তিনি চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, এই বিভাগে দক্ষ ও যোগ্য জনবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। আবার বাড়তি ও অপ্রয়জনীয় জনবলও রয়েছে। এ ছাড়া অত্যাধুনিক পরিচ্ছন্ন সরঞ্জাম এবং মশক নিধন সংক্রান্ত কার্যকরী ওষুধেরও অভাব রয়েছে। যে ওষুধগুলো ছিটানো হয় তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন থাকায় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের কীটতত্ত¡ বিভাগকে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়র পর তারা যে প্রতিবেদন পেশ করেছেন সেই ভিত্তিতেই চট্টগ্রাম নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম চলামন থাকবে। নগরীর নালা-নর্দমা-খাল সংস্কারের জন্য ২ হাজার ৫শত কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আশা করি তা অনুমোদিত হবে।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, পরিচ্ছন্নতা সুরক্ষায় আপাতত নগরীর দু’একটি ওয়ার্ডের আবাসিক এলাকায় আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা সেবা দেয়া যায়। তবে এজন্য বাড়তি ট্যাক্স আদায়েরও কোন সুযেগ নেই। কারণ নগরবাসী এই খাতে একবার ট্যাক্স দিতে অভ্যস্থ।

তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বিদ্যমান জলাবদ্ধতা সংকট সম্পর্কে বলেন, এই সংকট নিরসনে সরকারের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার দু’টি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এগুলো মূলত সিডিএ বাস্তবায়ন করছে। বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে-এ নিয়ে চিন্তায় আছি। কেননা চট্টগ্রাম নগরীতে ৫৭টি খলের মধ্যে ৩৩টি খাল সিটি কর্পোরেশনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এই খালগুলোর পুনরুদ্ধার সংস্কার ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন কতটুকো সফল হতে পারে তা বুঝতে পারছি না। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন খালের উপর যে বাঁধগুলো দেয়া হয়েছিলো এবং এখনো আছে সেগুলো অপসারনের কথা দিয়েও তা করা হয়নি। এ কারণে এবার বর্ষা মৌসুমে নগরীতে জলাবদ্ধতা প্রকট হয়েছে, ফলে নালা-নর্দমাÑখালে পড়ে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি উল্লেখ করেন যে, করোনা অতিসংক্রমণ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সরকারের নির্দেশনা অনুয়াযী যে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছে তা সাফল্যের সুচক অর্জন করেছে। করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নগরীতে লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে যে সীমা বেধে দিয়ে ছিল তা অর্জিত হয়েছে। এখনো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¡াবধানে নগরীর ১১টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপশি বিনা খরচে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আইসোলেশন সেন্টারে কোভিড আক্রান্তদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। তিনি আইসোলেশন সেন্টারে যারা কাজ করছেন এবং কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে চসিকের যে সকল জনবল কাজ করছে তাদেরকে ৩০শতাংশ হারে অতিরিক্ত ভাতা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।


তিনি আরো বলেন, এবার বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘায়িত ও অতিবর্ষণ হওয়ায় নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয়নি। পোর্ট কানেকটিং রোড ও মাঝির ঘাট ষ্ট্যান্ড রোড দীর্ঘদিন ধরে যান ও জন-চলাচল উপযোগিতা হারিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা কাজ না করে সটকে পড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব কাজের জন্য নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়ছে। এই সড়ক দুটিসহ নগরীর অচল সড়কগুলোকে যানবাহন চলাচল উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে সকল রাস্তা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সেগুলো ঠিক করে দেয়ার দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা তা করেননি বলেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন করা হবে এবং সমগ্র নগরীকে পর্যায়ক্রমে আলোকায়নে এলইডি লাইটের আওতায় আনা হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইতোমধ্যে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে। তিনি আরো জানান, নগরায়নের ক্ষেত্রে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হবে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে শিশু পার্ক স্থাপন করা হবে।


চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনর সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, প্যানেল মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।