চট্টলা ডেস্ক:
বাংলাদেশ সরকার চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতিসংঘ সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ঢাকায় বৈশ্বিক সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ স্বউদ্যোগে কোনো দেশকে এমন সহযোগিতা দিয়ে দেয় এমন না, অনুরোধ পেলে সে অনুযায়ী নির্বাচনী সহযোগিতা দিয়ে থাকে।’‘
সুতরাং যদি এমন কোনো অনুরোধ পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের সুশাসনের সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্কের ভিত্তিতে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে জাতিসংঘ।’
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মিয়া সেপ্পো।
বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে এসেছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো। তবে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল।
বিএনপি নেতারা তখন জাতিসংঘের ‘তত্ত্বাবধানে’ নির্বাচনের দাবি তুললেও তা সার্বভৌম দেশের জন্য ‘মর্যাদাহানিকর’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।নতুন নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে আবার ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আগের দাবিই তোলা হচ্ছে। আর আগের মতোই ক্ষমতাসীনরা সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করছে।
এই প্রেক্ষাপটে রোববারের অনুষ্ঠানে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি কোন পদ্ধতিতে জাতিসংঘ কোনো দেশকে নির্বাচনী সহযোগিতা দেয়, তার ব্যাখ্যাও দেন আবাসিক প্রতিনিধি।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ যে পদ্ধতিতে কাজ করে, সেখানে কেউ আমাদের না বললে আমরা নির্বাচনী সহযোগিতা দিই না। সুতরাং পদ্ধতি হচ্ছে, অনুরোধ পেলে জাতিসংঘের নির্বাচনী সহযোগিতা বিভাগ কাজে নামে এবং প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের পর সে অনুযায়ী কাজ এগোয়।’এর আগে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ বসার চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি জাতিসংঘ।
এবার নির্বাচন কমিশন গঠন তেমন সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘নির্বাচন এগিয়ে এলে কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে যে কোনো দেশের অংশীজনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এটা এখানেও হতে পারে। তা হতে পারে এটা জাতিসংঘ কিংবা অন্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগে।’‘আমি আশা করি না, এটা আগের বছরগুলোর তুলনায় ভিন্ন রকম হবে। অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্ন রকম হবে তাও প্রত্যাশা করি না।
’মানবাধিকার পরিস্থিতি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কথা বলেন মিয়া সেপ্পো।তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পেরিওডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, যেটাকে বাংলাদেশ সমর্থন করেছে। সুপারিশের কেন্দ্রে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিস্থিতির সঙ্গে আইনটিকে সঙ্গতিপূর্ণ।’‘
সরকার ও বিশেষ করে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে, যাতে ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যায়। অপব্যবহার কমাতে ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার এই আইনের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।’
ডিজিটাল মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘ইউপিআর অনুযায়ী বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। আমরা আশা করি পর্যালোচনার কাজ সামনের দিকে এগোবে।’ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমানের সঞ্চালনায় ডিক্যাব টকে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দিন।