চট্টলা ডেস্ক :
লেখক আব্দুল হাকিমের পর কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
শনিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকায় নিজ বাসায় কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
পুরান ঢাকার বাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সারওয়ার আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বুলবুল চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন আলোকচিত্রী কামরুল হাসান।
বুলবুল চৌধুরীর স্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বুলবুল ভাই দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে ভুগছিলেন।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে উনার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন বুলবুল ভাই কিছুক্ষণ আগে মৃত্যুবরণ করেছেন।
বুলবুল চৌধুরীর ছেলে আর রাফি চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ৬ মাস ধরে তার বাবার জ্বর ছিল এবং শরীরের ওজন কমে যাচ্ছিল। ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখনই তার বাবার ক্যানসার ধরা পড়ে।
রাফি চৌধুরী আরও জানান, তার বাবার ক্যানসার শ্বাসযন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ায় কিছু খেতে পারছিলেন না। কেমো দেওয়ার মতোও শারীরিক অবস্থা ছিল না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় বাবার চিকিৎসা চলছিল। লেখালেখির বাইরে পেশাগত জীবনে বুলবুল চৌধুরী সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বহুদিন। কাজ করেছেন দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন দৈনিকে।
তার প্রকাশিত ছোট গল্পগ্রন্থগুলো হলো ‘টুকা কাহিনী’, ‘পরমানুষ’, ‘মাছের রাত’ ও ‘চৈতার বউ গো’।তার উপন্যাসের তালিকায় রয়েছে- ‘অপরূপ বিল ঝিল নদী’, ‘কহকামিনী’, ‘তিয়াসের লেখন’, ‘অচিনে আঁচড়ি’, ‘মরম বাখানি’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘ইতু বৌদির ঘর’ এবং ‘দখিনা বাও’।তার আত্মজৈবনিক দুটি গ্রন্থের নাম ‘জীবনের আঁকিবুঁকি’ ও ‘অতলের কথকতা’।
‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা’, ‘নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত’ আর ‘প্রাচীন গীতিকার গল্প’ নামক কিশোর গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি।সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে বুলবুল চৌধুরী একুশে পদক লাভ করেন। আর বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান ২০১১ সালে।
এছাড়া তিনি হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার এবং ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
এর আগে একই দিনে চলে গেলেন জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক শেখ আবদুল হাকিম। শনিবার দুপুর ১টার দিকে নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যু সংবাদটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেেছেন তার মেয়ে সাজিয়া হাকিম।
১৯৪৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে শেখ আবদুল হাকিমের জন্ম। ব্রিটিশ ভারত ভাগ হলে চার বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন তিনি। ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝিতে সেবার আরেক সিরিজ ‘কুয়াশা’র দশম কিস্তি দিয়ে প্রকাশনীটির সঙ্গে যুক্ত হন শেখ আবদুল হাকিম। অবশ্য এর আগেই লিখে ফেলেন নিজের প্রথম উপন্যাস ‘অপরিণত প্রেম’। সেবার সঙ্গে প্রায় চার দশক যুক্ত ছিলেন শেখ আবদুল হাকিম।
শেখ আবদুল হাকিম সেবা প্রকাশনীর পাঠকপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনী ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৭১টির এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক।‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজ ছাড়াও রোমান্টিক, অ্যাডভেঞ্চার-সহ নানান স্বাদের বই উপহার দিয়েছেন এই লেখক।‘মাসুদ রানা’ সিরিজের বইয়ের স্বত্ব দাবি করে আইনি লড়াইয়ের কারণে গত বছর আলোচনায় আসেন শেখ আবদুল হাকিম।