নগর প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে ভর্তি অবস্থায় নবজাতক নাতিকে বিক্রি করে চুরির নাটকের অভিযোগে অপহরণের মামলায় নানীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
বুধবার (৬ অক্টোবর) ভোরে হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় নবজাতককেও উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. হারুন (৫৫), মনোয়ারা বেগম (৩৭) ও রাবেয়া খাতুন (৩২)।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, নবজাতক অপহরণের অভিযোগে মায়ের নামে মামলা করেছে মেয়ে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়ের মা রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। নবজাতকটিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে বাচ্চাটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ওসি জাহিদুল কবির আরও জানান, রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা রাবেয়া খাতুনের মেয়ে তানিয়া গত ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর জালালাবাদে একটি বাসায় ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। অসুস্থ শিশুটিকে ওইদিনই তার মা ও নানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে তানিয়ার অবর্তমানে রাবেয়া শিশুটিকে হারুন ও তার বোন মনোয়ারার কোলে তুলে দেন। তানিয়া হাসপাতালে গিয়ে ছেলের খোঁজ করলে রাবেয়া জানান, শিশুটি চুরি হয়ে গেছে। তখন তানিয়া পাঁচলাইশ থানায় বিষয়টি অবহিত করেন। পরে পুলিশ গিয়ে রাবেয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, শিশুটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
এর কারণ সম্পর্কে ওসি জানান, গর্ভাবস্থায় তানিয়া তার মায়ের কাছে চলে গিয়েছিল। দরিদ্র রাবেয়া মেয়ের প্রয়োজনীয় খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। মেয়ের গর্ভাবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন, প্রসবের পর শিশুটি তিনি বিক্রি করে দেবেন।পূর্বপরিচিত হারুন ও তার বোন মনোয়ারার কাছে শিশু হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বিভিন্নসময় ৫৭ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এরপর চারদিন বয়সী শিশুটিকে মেয়ের অজান্তে তাদের কাছে হস্তান্তর করেন।এ ঘটনায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানান ওসি জাহিদুল কবির।
এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নবজাতকের মা তানিয়া বেগমকে তার স্বামী বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। গর্ভাবস্থায় তিনি তার মায়ের বাড়িতে অবস্থান নেন। এক সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দারিদ্রতার কারণে তার মা রাবেয়া বেগম চিকিৎসা করতে অপারগ হন। পরে নানী রাবেয়া জৈনক হারুন ও মনোয়ার বেগম নামে দুইজনের সঙ্গে বাচ্চাটি পাচারের পরিকল্পনা করে এবং তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ৫৭ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
গত ২ অক্টোবর নবজাতকটি প্রসবের পর অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাবেয়া খাতুন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে মেয়ে তানিয়াকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে কোনো এক সময় সবার অজান্তে নবজাতকটিকে হারুন ও মনোয়ারার কাছে দিয়ে দেয়। পরে নবজাতকের মা হাসপাতালে এসে বাচ্চাকে দেখতে না পেয়ে জানতে চাইলে বাচ্চার নানী রাবেয়া নবজাতকটি চুরি হয়ে গেছে বলে জানায়।