বোয়ালখালী প্রতিবেদক:
ইয়াছমিন আক্তার এনি (২৪) নিহত হওয়ার পর ওই তরুণীর মা রোকসানা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনির স্বামীসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকারম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, মুসলিম পরিবারের ওই তরুণীকে বিয়ে করেন বাবলু দে প্রকাশ তনু (৩০) নামের এই তরুণ যিনি মামলার প্রধান আসামি।
জানা গেছে, বাবলু ধর্ম পরিচয় গোপন রেখে মিথ্যে পরিচয়ে মুসলিম তরুণী এনির সঙ্গে গড়েন প্রেমের সম্পর্ক। একপর্যায়ে বিয়ে করে সংসারও পাতেন। সেই সংসারে দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে তাদের।
বাদী পক্ষের অভিভাবকের মামলায় অভিযোগ করেছে বিয়ের পর নির্যাতন করে হত্যার পর হিন্দু রীতিতে পুড়িয়ে ফেলে তার স্বামী বাবুল।
মুসলিম মেয়েকে জামাই কেন হিন্দু রীতিতে পোড়ালো— এই নিয়ে শুরু হয়েছে বোয়ালখালী উপজেলায় তোলপাড়।
মামলার পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাত ১টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত ওই তরুণীর স্বামী বাবলু দে তনুকে (৩০) উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা বীণাপানি সংঘ পুজামণ্ডপ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন— মোহাম্মদ মোকারম (৫৬), পবন দাশ (৫৫), রতন চৌধুরী, সাধন মহাজন (৬০), নিমাই দে (৪৫), শংকর দত্ত (৩৩), অরবিন্দ মহাজন (৫০), অরুন দাশ (৫০), দিলীপ দেব (৪৫), প্রদীপ সুত্রধর (৪০), রাম প্রসাদ (৩৮), রনি দে (৩০), অরুপ মহাজন (৪২), সমর দাশ (৫৫), রবীন্দ্র ধর (৬০), নিপুন সেন (৬০) ও ইউসুফ প্রকাশ ড্রেজার ইউসুফ (৩৫) ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) সুমন দে জানিয়েছেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩ আগস্ট। ওই গৃহবধূ মুসলিম পরিবারের মেয়ে। মারা যাওয়ার পর তার লাশ আগুনে পুড়ে ফেলায় নিহতের মা এ ঘটনায় আদালতে স্বামীসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মামলা দায়ের করে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বোয়ালখালী থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।’
তিনি আরও জানান, ‘ওই গৃহবধূর স্বামী বাবলু দে একটি সেলুনের দোকানে কাজ করতেন। ঘটনার পর সেখান থেকে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। জ্যৈষ্ঠপুরা থেকে পালানোর প্রস্তুতিকালে বৃহস্পতিবার রাত ১টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বন্দরটিলায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় ওই এলাকার সেলুনের কর্মচারী বাবলু দে’র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ইয়াছমিন আকতার এনির। তিন বছর আগে তারা পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করেছেন। এক বছর শহরে থাকার পর গত দুই বছর ধরে তারা জ্যৈষ্ঠপুরায় চলে আসে। বাবলু মুসলিম মেয়ে বিয়ে করেছে এই বিষয়টি গ্রামের এলাকাবাসী কেউ জানতেন না।
উল্লেখ্য যে, গেল ৩ আগস্ট বিকেল ৩টার সময় নিহত এনির খালাতো বোন হাসিকে স্বামী বাবুল মোবাইল ফোনে জানায় যে তার স্ত্রী এনি স্ট্রোক করে মারা গেছে। খালাতো বোন হাসি এনির পরিবারকে এই খবরটি জানায়। এনি মারা গেছেন শুনে তার মা লাশ নিতে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দেবেন বলে জানানোর পর ওই রাতেই বাবুলের ভাই পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে এনির মা ও পরিবারকে যেতে বারণ করেন।
মোবাইলে জনির মাকে জানানো হয়, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় লোজনের পরামর্শে এনির লাশ সৎকার করা হয়েছে।
এদিকে এনির মা একজন মুসলিম মেয়েকে কীভাবে সৎকার করেছেন জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার এবং প্রতিনিধিদের পরামর্শে লাশ আগুনে পুড়িয়ে সৎকার করা হয়েছে।
এতে গত ১৬ আগস্ট নিহত এনির মা রোকসানা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনির স্বামীসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।